মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো ২০২৪
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো ২০২৪
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দিন দিন প্রযুক্তির উৎকর্ষের মাধ্যমে যে জিনিসটির সাথে আমরা সবচেয়ে বেশি সম্পর্কিত হয়ে পড়েছি তা হলো মোবাইল ফোন। আমাদের দৈনন্দিন কাজের শুরুটাই হয় মোবাইলের এলার্ম এর মাধ্যমে, এবং দিনশেষে ঘুমাইতে যাওয়ার সময়ও মোবাইলই হয় আমাদের নিত্যসঙ্গী। এরই মাঝে দিনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশে আমরা মোবাইল নিয়ে কাটাই। সেটা হতে পারে ভিডিও দেখে, অডিও মিউজিক শুনে, বা গেমস খেলে। কিন্তু তার বিহীন ক্ষুদ্র এই মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমরা একেবারে অসচেতন, এই আধুনিক যন্ত্রটির মাত্রাতিক্ত ব্যবহারের ফলে কত ধরনের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি দেখা দিতে পারে, সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা।
তাই আসুন আমরা আজকের এই পোস্টে জেনে নেই মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি?
ব্যবহৃত মোবাইলের দাম জানতে এখানে ক্লিক করুন।
(১) ঘাড় ব্যথা:
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলোর ভিতরে অন্যতম হলো ঘাড় ব্যথা।
দীর্ঘ সময় মাথা ঝুকিয়ে মোবাইলে পুথ হয়ে থাকার কারণে দেখা দিতে পারে ঘাড় ব্যথার সমস্যা। অধিক গেমস্ আসক্তির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ভিডিও দেখা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় মনোযোগ বেশি দিতে গিয়ে অনেক সময় মোবাইল ব্যবহারের সঠিক দূরত্ব ও বডি পজিশন ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। ফলে মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকার কারণে ঘাড়ে ব্যথা দেখা দেয়, এজন্য যে কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সঠিক দূরত্ব ও বডি পজিশন ঠিক রেখে ব্যবহার করা উচিত।
(২) চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া:
চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলোর উল্লেখযোগ্য কারণ গুলোর ভিতরে একটি। গবেষকদের মতে এই বিষয়টি এপি জেনেটিক সম্পর্কিত বিষয়, অর্থাৎ দীর্ঘ সময় চোখের খুব কাছে রেখে মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার এক ধরনের জিনগত সমস্যা দেখা দেয়। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার দৃষ্টিহীনতার কারণ হতে পারে। মার্কিন ম্যাকমিলান ডিজেনারেশন অ্যাসোসিয়েশনের মতে মোবাইলের নিলাম আলো চোখের রেটিনা দীর্ঘস্থায়ী শক্তির মাধ্যমে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। স্ক্রিনের ফ্রন্ট সাইজ বড় করে চোখ থেকে অন্তত ১৬ ইঞ্চি দূরে রেখে এবং একটু পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য স্ক্রিন থেকে চোখ ফিরিয়ে সবুজ গাছপালার দিকে তাকানোর মাধ্যমে এ সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
(৩) কানে কম শোনা:
মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলা, হাই ভলিয়ামে গান শোনা এবং কানে হেডফোন গুঁজে রাখার মাধ্যমে দেখা দিতে পারে শ্রবণশক্তি রাশ হওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের শ্রবণশক্তি রাশ এর হার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি, দৈনিক দুই থেকে তিন ঘন্টার বেশি মোবাইল ব্যবহারকারীদের ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে আংশিক বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কানে হেডফোন লাগিয়ে যত্রতত্র চলাফেরায় প্রতিনিয়ত অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে, পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হওয়ার ট্রেন-বাস সহ নানা যানবাহন গত দুর্ঘটনায় বিরাট সংখ্যক কানে হেডফোন লাগিয়ে চলাফেরার কারণে হচ্ছে।
প্রয়োজন অতিরিক্ত সাউন্ডে গান না শোনা, সময় হেডফোন গুঁজে না থাকা এবং দীর্ঘ সময় মোবাইলে কথা বলার প্রবণতা কমিয়ে আনা সহ সর্বোপরি সচেতনতায় হতে পারে এর কার্যকর সমাধান।
(৪) অস্থি সন্ধি গুলোর ক্ষতি:
গবেষণায় দেখা গেছে সাধারন একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী স্কিনের ট্যাব ক্লিক ও শুয়াইপের পরিমাণ গড়ে ২,৬১৭ বার এবং সর্বোচ্চ ৫,৪২৭ বার। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে টাইপের ফলে আংগুলের জয়েন্ট ব্যথা হয়। এমনকি এর ফলে আর্থারাইটিসের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া বসার ভঙ্গি কাথ ও কানের মাঝা মাঝি ফোন রেখে কথা বলা এবং অতিরিক্ত ঝুকে দীর্ঘক্ষন মেসেজ টাইপিং এর কারণে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে বেশি সময় ধরে মেসেজ টাইপিং না করা এবং সঠিক পদ্ধতিতে মোবাইল ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
(৫) শুক্রাণু কমে যাওয়া:
মোবাইল ফোন থেকে নির্গত হওয়া হাই ফ্রিকোয়েন্সির ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন শরীরের বিভিন্ন কৌশ ও পুরুষের প্রজনন তন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। মোবাইলের ক্ষতিকর তরঙ্গ শুক্রাণুর ঘনত্ব কমানো ও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। ফোন ব্যবহারের পর প্যান্টের পকেটে বা সাইড পকেটে রেখে দেয়ার সময় মোবাইল যথেষ্ট উত্তপ্ত থাকার ফলে অণ্ডকোষের চারপাশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়। যার ফলে শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এজন্য প্যান্টের পকেটে বা শরীরের স্পর্শকাতর কোন অঙ্গের বেশি কাছে মোবাইল ফোন না রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
(৬) নমোফোবিয়া:
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মনের মধ্যে সবসময় মোবাইল আছে কিনা, নাকি হারিয়ে গেল এমন একটি ভয় তৈরি হয় এ রোগের নাম (নোবোফিয়া) তথা নো মোবাইল-ফোন ফোবিয়া' যুক্তরাজ্যের ও ভারতের তরুণরা যথাক্রমে ৫৩ ও ২৯ শতাংশ এ রোগের শিকার। এছাড়া মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের ওপর যার প্রভাব পড়তে দেখা যায়, মোবাইলে নির্ভরতা যথাসম্ভব কমিয়ে আনায় হতে পারে এর কার্যকর সমাধান।
(৭) হঠাৎ রিংটোন শোনা:
মনের উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতা থেকে মাত্রাতিক্ত মোবাইল ব্যবহারকারীরা আকস্মিক রিংটোন বা ভাইব্রেশন বেজে ওঠা শব্দ শুনতে পায়। অর্থাৎ তাদের কাছে মনে হয় যে কেউ বোধহয় কল করল বা কোন নোটিফিকেশন আসলো, অথচ বাস্তবে এমন কিছুই হয়নি। মোবাইল থেকে দূরে থাকা এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
(৮) মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া:
দীর্ঘক্ষন মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে অনেক সময় ব্যবহারকারীর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। একই সাথে অস্থিরতা ও অমনোযোগিতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত তখন ব্যবহারকারীর সহজে সমস্যা উপলব্ধি করতেও পারেন না। নিজের অজান্তেই কারো সাথে অশোভন আচরণ করে ফেলেন, এ ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হলে অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি কমিয়ে আনতে হবে।
(৯) চিন্তা শক্তি কমে যাওয়া:
মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারে ফলে মানুষের তড়িৎ চিন্তা শক্তি কমে যায়। সৃজনশীল মেধা কমে যাওয়ার ফলে কোন কিছুর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়। মোবাইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও নকল করার মতো অপরাধের আশ্রয় নেয়ার ফলে দিন দিন দেশের মেধাবী ছাত্ররা নৈতিক অবস্থান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মোবাইলে গেমস ও সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদির প্রতি আসক্তির ফলে শিশু কিশোররা পানাহার ও দৈনন্দিন কাজকর্মে অমনোযোগী হয়ে পড়ছেন। মার্কিন ভাইরাস বিজ্ঞানীরা মনে করেন মোবাইলের তরঙ্গ রশি শিশুদের স্বাস্থ্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে। জাপানের ডকুমো ফাউন্ডেশন পাঁচটি দেশে জরিপ করে ৭০ শতাংশ শিশুর পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন তার কারণ হিসেবে মোবাইল ফোনকে দায়ী করেছে। তাই নির্দিষ্ট বয়সের আগে কোন ভাবে শিশুর হাতে মোবাইল তুলে দেয়া যাবে না। অনেক সময় শিশুর কান্না বা রাগ ভাঙ্গাতে অভিভাবকরা মোবাইল কার্টুন বা গান চালিয়ে শিশুর হাতে দেন, যা পরবর্তীতে প্রোপার সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
(১০) পর্নো-আসক্তি:
মোবাইল ফোন স্লভ হাওয়া বর্তমানে সব বয়সী মানুষের কাছে এটি সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে চলেছে, আকাশ সংস্কৃতির ফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তরুণরা পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নামক একটি সংগঠনের গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে রাজধানী ঢাকার ৭৭% স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পর্ণগ্রাফি আসক্তি তৈরি হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে বিকৃত যৌনাচারের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনে মোবাইল ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং এর ফলস্বরূপ পর্ণগ্রাফি আসক্তি অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই শিশু-কিশোরদের পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ে রাখতে হবে ঘরের মোবাইলে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট ব্লক রাখতে হবে।
সর্বশেষ কথা:-
তো পাঠক এই ছিল আমার জানা মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ক্ষতিকর দিকগুলো, আর এই ক্ষতিকর দিকগুলো আমি আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরলাম আপনাদের সঙ্গে। এই ক্ষতি করতে গুলোর বাইরেও যদি অন্য কোন মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক আপনার জানা থাকে তাহলে সেটি কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। সেই সাথে এটিও জানাতে পারেন আজকের এই পোষ্টটি আপনার কেমন লাগলো। আর হ্যাঁ যদি ভালো লেগেই থাকে তাহলে আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডস সহ সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। আজকের মত আমি এখানেই বিদায় নিচ্ছি আবারো পরবর্তী কোন আর্টিকেলে দেখা হবে আপনাদের সঙ্গে, সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।