আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?

 প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন   |   ব্যবসা ও শিল্পকারখানা , নিউজ ও রিভিউ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?

বর্তমান  দুনিয়ায় চারপাশে তাকালেই আপনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ছাপ দেখতে পাবেন। আপনার হাতের স্মার্টফোন, যা দ্রুততার সাথে আপনার কথাবার্তা বুঝে উত্তর দেয়, ডাক্তারি রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে, এমনকি আপনার গৃহকর্মে সাহায্যকারী রোবট— সবই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অসাধারণ ক্ষমতার উদাহরণ। AI শুধুমাত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করছে না, বরং আমাদের বিভিন্ন রকমের ভারি কাজ সহ সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে সাহায্য করছে।কিন্তু কী এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স? কীভাবে এটি কাজ করে? এর ইতিহাসই বা কি? সবকিছু জানবো আজকের আয়োজনে। আশা করছি আজকের পোস্টটি আপনার ভিশন ইন্টারেস্টিং লাগবে। আজকের পোষ্টের সূচিপত্র গুলো দেখে নিই চলুন।


  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?

  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার

  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সুবিধা & অসুবিধা

  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে কাজ করে?

  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জনক কে?

  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর খারাপ দিক?

  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভালো দিক?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার সিস্টেমকে এমন ক্ষমতা প্রদান করা যাতে এটি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে, শিখতে পারে, এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। সহজ কথায়, কম্পিউটারকে এতটা বুদ্ধিমান করে তোলা হয় যাতে এটি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং এমনকি ভবিষ্যতের পূর্বাভাসও দিতে পারে। এই প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য হলো কম্পিউটারের চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে মানুষের মতো করে তোলা।


প্রথমে, বিশাল পরিমাণ তথ্য বা ডেটা কম্পিউটারে প্রদান করা হয়, যা থেকে এটি বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে। তারপর, সেই ডেটা বিশ্লেষণ করে, কম্পিউটার নিজস্ব চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করে। এটি যেমন একটি নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করতে পারে, তেমনি নতুন সমস্যার ক্ষেত্রেও মানুষের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।


তবে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রধানত দুই প্রকার:

১. সংকীর্ণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Narrow AI): এটি বিশেষ একটি কাজের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গুগল ট্রান্সলেটের ভাষা অনুবাদ ব্যবস্থা, যা এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অনুবাদ করতে পারে। কিন্তু এর বাইরের কোনো কাজ বা বিষয় এটি বুঝতে বা সম্পাদন করতে পারে না।


২. সাধারণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (General AI): এটি এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা মানুষের মতো সমস্ত কিছু বুঝতে এবং করতে সক্ষম হবে। এটি যে কোনো পরিস্থিতিতে মানুষের মতোই চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে, সাধারণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখনো বাস্তবে কার্যকর হয়নি, এটি এখনো গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে।


আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ প্রভাব ফেলছে, যেমন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, ভাষা অনুবাদ, চিকিৎসা সেবা, এবং আরও অনেক কিছুতে। ভবিষ্যতে, এটি আরও উন্নত হয়ে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে কাজ করে?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মূলত দুটি প্রধান উপাদান—অ্যালগরিদম এবং মেশিন লার্নিং—ব্যবহার করে কাজ করে। এর কাজের প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হলেও সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা যাক।


প্রথমে, বিশাল পরিমাণ তথ্য বা ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্যভাণ্ডারে বিভিন্ন ধরনের ডেটা থাকতে পারে, যেমন ছবি, লেখা, সংখ্যা, বা অন্য কোনো প্রকারের তথ্য। এই ডেটা বিশ্লেষণ করার জন্য AI অ্যালগরিদম ব্যবহার করে, যা এক ধরনের পদক্ষেপের ধারাবাহিক নিয়ম যা সমস্যার সমাধান দেয়। 


মেশিন লার্নিং হলো AI এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা অ্যালগরিদমকে আরও বুদ্ধিমান করে তোলে। এটি একটি শিক্ষার প্রক্রিয়া, যেখানে কম্পিউটার নিজেই শেখার ক্ষমতা অর্জন করে। প্রাথমিকভাবে, মেশিন লার্নিং মডেল তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ডেটা এবং উদাহরণ ব্যবহার করা হয়। একবার এই মডেল তৈরি হয়ে গেলে, এটি নতুন ডেটা দেখে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং পূর্বাভাস দিতে পারে।


উদাহরণস্বরূপ, ভাবুন আপনি একটি AI সিস্টেম তৈরি করতে চান যা বিড়ালের ছবি চিনতে পারে। প্রথমে, আপনি হাজার হাজার বিড়ালের ছবি সংগ্রহ করবেন এবং সেই ডেটা AI সিস্টেমকে প্রদান করবেন। এরপর AI সেই ডেটা বিশ্লেষণ করে বিড়ালের ছবি চেনার জন্য একটি মডেল তৈরি করবে। পরবর্তীতে, যখন আপনি নতুন কোনো বিড়ালের ছবি সিস্টেমে প্রবেশ করাবেন, তখন এটি সেই মডেল ব্যবহার করে বুঝতে পারবে যে এটি একটি বিড়ালের ছবি কিনা।


AI এর আরেকটি বড় সুবিধা হলো এর ধারাবাহিক এবং নিরবচ্ছিন্ন কাজের ক্ষমতা। মানুষ দীর্ঘ সময় কাজ করলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং ভুল করার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু AI সিস্টেম কখনো ক্লান্ত হয় না, এবং এটি অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম। যেমন, একটি AI সিস্টেম একদিনে লাখ লাখ চিকিৎসা রিপোর্ট বিশ্লেষণ করতে পারে, যেখানে একজন মানুষের জন্য তা প্রায় অসম্ভব।


ভবিষ্যতে, AI আরও উন্নত হবে এবং মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করার ক্ষমতা অর্জন করবে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারবে, যা আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ সুবিধা প্রদান করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই অগ্রগতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিপ্লব ঘটাবে এবং মানবজীবনকে আরও সহজ এবং কার্যকর করে তুলবে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ইতিহাস

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (AI) ইতিহাস দীর্ঘ এবং চিত্তাকর্ষক। AI-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫০ সালের দিকে, যখন বিখ্যাত গণিতবিদ অ্যালান টুরিং তার প্রস্তাবিত টুরিং টেস্টের মাধ্যমে মেশিনের বুদ্ধিমত্তা যাচাই করার একটি তাত্ত্বিক ধারণা উপস্থাপন করেন। টুরিং টেস্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি মেশিনকে বুদ্ধিমান হিসেবে বিবেচিত করার জন্য তার ক্ষমতা যাচাই করা, যা মানুষের সাথে তার আচরণে নির্ভর করে।


১৯৫০-এর দশক: টুরিং টেস্টের যুগ

১৯৫০ সালে, অ্যালান টুরিং তার প্রবন্ধ (Computing Machinery and Intelligence) প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে তিনি প্রথমবারের মতো প্রশ্ন তুলে বলেন (Can machines think?) তার এই প্রবন্ধে তিনি টুরিং টেস্টের ধারণা উপস্থাপন করেন, যা আজও AI গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।


১৯৫৬: ডার্টমাউথ সম্মেলন

১৯৫৬ সালে, জন ম্যাকার্থি ডার্টমাউথ কলেজে প্রথমবারের মতো AI-সম্পর্কিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। এই সম্মেলনটিকে AI-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে উপস্থিত বিজ্ঞানীরা AI-এর সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন, এবং AI গবেষণার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।


১৯৬০-এর দশক: প্রথম AI প্রোগ্রাম

১৯৬০-এর দশকে, AI গবেষণা ধীরে ধীরে শুরু হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়। এই সময়ে প্রথম AI প্রোগ্রাম তৈরি হয়, যা তাত্ত্বিক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম ছিল। তবে, এই সময়ে গবেষণার গতি কিছুটা মন্থর ছিল এবং অনেক বিজ্ঞানী এর সম্ভাবনা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন।


১৯৮০-এর দশক: মেশিন লার্নিংয়ের উত্থান

১৯৮০-এর দশকে, মেশিন লার্নিংয়ের উত্থানের মাধ্যমে AI নতুন দিগন্ত পায়। এই সময়ে বিশেষজ্ঞ সিস্টেমের বিকাশ হয়, যা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের জ্ঞান ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম ছিল। এই প্রযুক্তি AI-এর গবেষণা ও প্রয়োগে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে এবং বিজ্ঞানীরা AI নিয়ে নতুন করে আশাবাদী হন।


২০০০-এর দশক: ডিপ লার্নিং এবং বিগ ডেটার আবির্ভাব

২০০০ সালের পর থেকে, ডিপ লার্নিং এবং বিগ ডেটার আবির্ভাব AI গবেষণাকে দুর্বার গতিতে অগ্রসর করে। ডিপ লার্নিং প্রযুক্তি এবং শক্তিশালী কম্পিউটিং ক্ষমতা AI-কে আরও কার্যকর এবং সক্ষম করে তোলে। ২০১৬ সালে, গুগলের ডিপমাইন্ড ডেভেলপ করা আলফাগো কম্পিউটার প্রোগ্রামটি গো খেলায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে পরাজিত করে, যা AI গবেষণার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।


আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ইতিহাস দীর্ঘ এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও উদ্ভাবনের সাথে সমৃদ্ধ। টুরিং টেস্ট থেকে শুরু করে আলফাগোর বিশ্বজয়ের মতো ঘটনা পর্যন্ত, AI এর যাত্রা অবিশ্বাস্য এবং উত্তেজনাপূর্ণ। ডিপ লার্নিং এবং বিগ ডেটার উন্নতির সাথে, AI গবেষণা আরও দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে। AI-এর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং এর অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও উন্নত ও সুষ্ঠু করে তুলবে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর সুবিধা

আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং ডিপ লার্নিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। এর বিশেষ কারণ হলো, AI খুব দ্রুত এবং সহজে প্রচুর পরিমাণে ডেটা প্রসেস করতে পারে এবং নির্ভুলভাবে বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। AI প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রসেস করছে, যা মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এই ডেটা প্রসেস করে AI সঠিক সম্ভাবনা দেয়, যা অবিলম্বে ব্যবহার করা যেতে পারে।


চলুন দেখে নেওয়া যাক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা:


১. ভুল সংশোধন

মানুষের কাজের কারণে অনেক ভুল হতে পারে, কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এই ভুলগুলো সহজেই সংশোধন করা যায়। AI নির্ভুল অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে কাজ করে, ফলে ভুলের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।


২. নতুন ধারণা লাভ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আমরা নতুন কিছু সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রের ডেটা বিশ্লেষণ করে নতুন তথ্য ও ধারা খুঁজে বের করতে পারে, যা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।


৩. গ্রাফিক্স ডিজাইনিং

কৃত্রিম উপায়ে, আমরা কিছু ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোনো গ্রাফিক ডিজাইনিং জ্ঞান ছাড়াই সহজেই বিভিন্ন গ্রাফিক্স তৈরি করতে পারি। AI-নির্ভর টুলগুলো ব্যবহার করে গ্রাফিক্স ডিজাইন করা এখন খুবই সহজ এবং সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে।


৪. দ্রুত এবং নির্ভুল কাজ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ফলে যেকোনো কাজ খুব কম সময়ে এবং নির্ভুলভাবে করা যায়। AI এর অ্যালগোরিদম দ্রুতগতিতে কাজ করতে সক্ষম, ফলে সময় সাশ্রয় হয় এবং কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।


সংক্ষেপে বললে: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধাগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলছে এবং আমাদের কাজকে সহজতর করছে। এটি ডেটা প্রসেসিং থেকে শুরু করে নতুন ধারণা লাভ এবং দ্রুত ও নির্ভুল কাজ করা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ কার্যকারিতা প্রদান করছে। যদিও এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে, তবুও এর সুবিধাগুলো এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এগুলোকে উপেক্ষা করা যায় না। AI-এর উন্নতি এবং বিস্তার আমাদের ভবিষ্যতের কাজের ধরণকে আরও পরিবর্তন করবে এবং নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অসুবিধা

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) আমাদের জীবনের অনেক কাজকে সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলছে। তবে, যদি আমরা গভীরভাবে চিন্তা করি, তবে আমরা দেখতে পাব যে এই সুবিধার সাথে কিছু গুরুতর অসুবিধাও রয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক AI-এর কিছু উল্লেখযোগ্য অসুবিধা:


১. বেকারত্বের সমস্যা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের প্রতিদিনের অনেক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে সক্ষম। তবে, এই কাজগুলো পূর্বে অনেক মানুষ হাতে করতেন এবং এই কাজের মাধ্যমে তাদের আয় হতো। এখন, যখন AI এই কাজগুলো করে, তখন অনেক মানুষের আয়ের উৎস কেটে যায়। ফলে, বেকারত্বের হার বাড়তে থাকে, যা সমাজে অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করে।


২. মানুষের অলসতা বৃদ্ধি

AI-এর ব্যবহারের ফলে মানুষ অনেক কাজ সহজে এবং দ্রুত করতে পারছে। কিন্তু এর ফলে মানুষ আরও অলস হয়ে পড়ছে। আগের মতো শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে মানুষের কর্মক্ষমতা ও উদ্যম হ্রাস পাচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে সমাজের অগ্রগতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।


৩. সৃজনশীল চিন্তার অভাব

AI-এর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষ তাদের চিন্তাশক্তির ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন কাজের জন্য AI-এর উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে মানুষের সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী ধারণার অভাব দেখা দিতে পারে।


৪. বুদ্ধিমত্তার অভাব

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হলো কম্পিউটার-উত্পাদিত বুদ্ধিমত্তা। যদিও এটি নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে সক্ষম, তবে এটি মানুষের মতো আবেগ, অনুভূতি এবং সামাজিক বুদ্ধিমত্তার অভাব রয়েছে। ফলে, দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যবহার কিছুটা উদ্বেগের বিষয় হতে পারে।


৫. উচ্চ ব্যয়

AI প্রযুক্তি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এর ডেভেলপমেন্ট, মেইনটেনেন্স এবং আপগ্রেডেশন খরচ অনেক বেশি। ছোট ও মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলোর জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ তারা এই প্রযুক্তির সুবিধা নিতে গেলে উচ্চ ব্যয়ের কারণে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে পারে।


সংক্ষেপে বললে: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অসুবিধাগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলছে। বেকারত্ব, মানুষের অলসতা বৃদ্ধি, সৃজনশীল চিন্তার অভাব, বুদ্ধিমত্তার অভাব এবং উচ্চ ব্যয়—এই সবগুলোই AI-এর নেতিবাচক দিক। যদিও AI আমাদের জীবনকে সহজতর করছে, তবে এর এই অসুবিধাগুলোকে সমাধান করতে হবে। আমাদের সতর্কভাবে এবং বিবেচনার সাথে AI-এর ব্যবহার করতে হবে, যাতে এটি আমাদের জন্য সহায়ক হয় এবং আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জনক কে?

জন ম্যাকার্থিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি একজন প্রখ্যাত আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ছিলেন। ১৯৫৫ সালে, ম্যাকার্থি প্রথমবারের মতো “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স” শব্দটি তৈরি করেন এবং ১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ কলেজে প্রথম আন্তর্জাতিক AI সম্মেলনের আয়োজন করেন। এই সম্মেলনটিকে AI-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা পরবর্তীতে প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।


জন ম্যাকার্থির অবদান

জন ম্যাকার্থি AI-এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য একটি সাধারণ প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরির উদ্যোগ নেন, যা "লিস্প" নামে পরিচিত। লিস্প এখনও পর্যন্ত AI গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। ম্যাকার্থি গেম থিওরিতে AI-এর ব্যবহার নিয়েও কাজ করেছেন এবং “টুরিং টেস্ট” নামে একটি পরীক্ষার প্রস্তাব করেছিলেন, যা একটি মেশিনকে বুদ্ধিমান হিসেবে নির্ধারণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।


অ্যালান টুরিং

অ্যালান টুরিং ছিলেন আরেকজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, যিনি AI-এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি “টুরিং মেশিন” তৈরি করেছিলেন, যা একটি তাত্ত্বিক কম্পিউটার যা কোনও ধারাবাহিকভাবে প্রোগ্রামযোগ্য কাজ সম্পাদন করতে পারে। টুরিং-এর কাজ কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং AI গবেষণায় অনুপ্রেরণা দিয়েছে।


মারভিন মিনস্কি

মারভিন মিনস্কি AI-এর বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি “সেলফ-রেপ্রেজেন্টিং সিস্টেম” নামে পরিচিত একটি তত্ত্ব তৈরি করেছিলেন, যা AI-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি প্রদান করে। মিনস্কির গবেষণা AI-এর তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দিক উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।


অ্যালেন নিউয়েল এবং হারবার্ট এ সাইমন

অ্যালেন নিউয়েল এবং হারবার্ট এ সাইমন “জ্ঞান-ভিত্তিক সিস্টেম” নামে পরিচিত একটি তত্ত্ব তৈরি করেছিলেন, যা AI-এর বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তাদের কাজ AI-এর জন্য নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি তৈরি করেছে এবং গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।


এই সব পথিকৃৎদের কাজ AI-এর বিকাশে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। তাদের প্রচেষ্টা এবং উদ্ভাবনী চিন্তাধারা আমাদেরকে আধুনিক AI প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। AI আজকের দিনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, এবং এই পথিকৃৎদের অবদান ছাড়া তা সম্ভব হতো না। তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন আমাদের ভবিষ্যতের প্রযুক্তি এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের জন্য অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এখন আর গবেষণাগারে বন্দী নেই; এটি বিভিন্ন শিল্পে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রভাব অনুভব করা যাচ্ছে। AI-এর বহুমুখী প্রয়োগ আমাদের জীবনকে আরও সহজ, সুষ্ঠু এবং উন্নত করছে। চলুন AI-এর কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যবহার দেখি:


স্বাস্থ্যসেবা

স্বাস্থ্যসেবায় AI-এর ব্যবহার বিপ্লব ঘটিয়েছে। চিকিৎসাগত ইমেজ বিশ্লেষণ করে AI দ্রুত এবং সঠিক রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করছে। এর ফলে ডায়াগনোসিসের সঠিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়া দ্রুততর হচ্ছে। এছাড়াও, AI রোগের ঝুঁকির ও পূর্বাভাস এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরামর্শ প্রদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে ফর এক্সাম্পল, IBM Watson Health ক্যান্সারের চিকিৎসায় AI ব্যবহার করে রোগীর জন্য সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করছে।


অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় AI-এর প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে AI প্রতারণা রোধে সাহায্য করছে। এটি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক তথ্য প্রদান করছে এবং আর্থিক বাজারের প্রবণতা বিশ্লেষণ করছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান AI-চালিত চ্যাটবট ব্যবহার করে গ্রাহকদের আর্থিক পরামর্শ প্রদান করছে, যা তাদের সেবা দ্রুত এবং সঠিকভাবে প্রদান করতে সাহায্য করছে।


শিক্ষা ব্যবস্থা

শিক্ষা ব্যবস্থায় AI-এর ব্যবহার শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করছে। AI শিক্ষার্থীর দক্ষতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠ্যক্রম ও শিক্ষণ পদ্ধতি নির্ধারণে সহায়তা করছে। শিক্ষার্থীরা AI-চালিত চ্যাটবট (যেমন Google Bard, ChatGPT) থেকে যেকোনো শিক্ষামূলক প্রশ্নের উত্তর সহজেই পেতে পারে। এর ফলে শিক্ষার গতি ও গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপুল পরিবর্তন আসছে।


বিনোদন

বিনোদন জগতে AI-এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। AI আকর্ষণীয় এবং ইন্টারেক্টিভ গেম তৈরি করছে, যা গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। চলচ্চিত্রের স্পেশাল ইফেক্টস তৈরিতে AI-এর ভূমিকা বিপ্লব ঘটিয়েছে। এখন এমনকি AI দিয়ে তৈরি সঙ্গীতও শোনা যাচ্ছে, যা সঙ্গীত জগতে নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা উন্মোচন করছে।


এই কয়েকটি উদাহরণ AI-এর ব্যবহার কিভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন আনছে তা প্রমাণ করে। প্রায় প্রতিটি শিল্পেই AI-কে কাজে লাগানোর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ভবিষ্যতে AI আরও বেশি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে, আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ ও উন্নত করবে। AI-এর এই অগ্রগতি আমাদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

Faq

প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণা দেন কে?

প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণা দেন ব্রিটিশ গণিতবিদ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং। ১৯৫০ সালে তার প্রকাশিত “Computing Machinery and Intelligence” প্রবন্ধে তিনি প্রথমবারের মতো প্রশ্ন তোলেন, "Can machines think?" এই প্রবন্ধে তিনি টুরিং টেস্টের ধারণা উপস্থাপন করেন, যা একটি মেশিনের বুদ্ধিমত্তা যাচাই করার একটি তাত্ত্বিক পরীক্ষা। টুরিং এর কাজ এবং তার টুরিং টেস্ট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয় এবং AI গবেষণার একটি ভিত্তি স্থাপন করে।


Artificial intelligence কে আবিষ্কার করেন?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) আবিষ্কারকে নির্দিষ্ট কোনো এক ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত করা কঠিন, কারণ এটি একটি সমষ্টিগত প্রচেষ্টার ফলাফল। তবে, জন ম্যাকার্থিকে (John McCarthy) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ কলেজে অনুষ্ঠিত প্রথম AI সম্মেলনের আয়োজন করেন এবং এই সম্মেলনে "Artificial Intelligence" শব্দটি তৈরি করেন। এই সম্মেলনটিকে AI-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া অ্যালান টুরিং, মারভিন মিনস্কি, হার্বার্ট এ. সাইমন এবং অ্যালেন নিউয়েলসহ আরও অনেক বিজ্ঞানী AI-এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।