বাটনবিহীন স্মার্ট ফোন বাজারে আনছে শাওমি

 প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ অপরাহ্ন   |   টেক নিউজ , নিউজ ও রিভিউ

বাটনবিহীন স্মার্ট ফোন বাজারে আনছে শাওমি

বাটনবিহীন স্মার্ট ফোন শাওমি

প্রযুক্তির জগতে প্রতিনিয়তই আমরা নতুন নতুন চমক দেখছি, এবং স্মার্টফোন শিল্পেও এর ব্যতিক্রম নয়। এক সময় বাটনবিহীন ফোনের ধারণাটি ছিল নিছক একটি কল্পনা, কিন্তু শাওমি সেই ফ্যান্টাসিকে বাস্তবতার আলো দেখাতে চলেছে। স্মার্টফোনের বাটনগুলো, যা একসময় ডিভাইসের অপরিহার্য অংশ ছিল, এখন অতীতের অংশ হতে যাচ্ছে। শাওমি তাদের নতুন প্রকল্পের অধীনে এমন একটি স্মার্টফোন তৈরি করছে, যা পুরোপুরি বাটনবিহীন। এটি শুধু প্রযুক্তির অগ্রগতির উদাহরণ নয়, বরং স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেবে। 


এই ডিভাইসটি কি আমাদের হাতের মুঠোয় ভবিষ্যতের প্রযুক্তির স্বাদ এনে দেবে? শাওমি যেন সেই জবাব দিতেই প্রস্তুত।

বাটনের বিদায়:

বাটনবিহীন ফোনের ধারণাটি প্রযুক্তি জগতে একেবারে অপরিচিত নয়। বহু প্রতিষ্ঠানই এ নিয়ে গবেষণা করছে এবং ভবিষ্যতের স্মার্টফোন কেমন হবে তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। তবে শাওমি এবার সেই ধারণাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চলেছে। তাদের নতুন প্রকল্পের নাম ‘ঝুবে’, যা আগের প্রোটোটাইপ ‘ওয়াংশু’ এর চেয়ে আরও আধুনিক ও অগ্রসর প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।


এখন প্রশ্ন হলো, বাটনবিহীন স্মার্টফোন শুধুই বাহ্যিক দিক থেকে আকর্ষণীয় হবে, নাকি এর ব্যবহারে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসবে? শাওমি এই উত্তরের জন্য প্রস্তুত। তারা এমন এক নতুন ইউজার ইন্টারফেস তৈরি করতে যাচ্ছে, যা কেবল ফোন ব্যবহারের অভ্যাসই নয়, আমাদের স্মার্টফোনের সাথে সম্পর্কের পুরো ধারণাকেই বদলে দেবে। ফিজিক্যাল বাটন ছাড়াই, স্মার্টফোনে কাজ করা যেমন আকর্ষণীয় হবে, তেমনি আরও সহজ এবং ফিউচারিস্টিক হয়ে উঠবে।


আধুনিক সেন্সর এবং ইশারার ব্যবহার

শাওমির নতুন বাটনবিহীন স্মার্টফোন প্রযুক্তির এক নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে। এই ফোনটিতে থাকবে ক্যাপাসিটিভ সেন্সর, আন্ডার-স্ক্রিন ক্যামেরা, এবং ইশারা নিয়ন্ত্রণ (gesture control) প্রযুক্তির মতো অত্যাধুনিক ফিচার। ফিজিক্যাল বাটনের যুগের অবসান ঘটিয়ে, এখন ব্যবহারকারীরা ফোনের বিভিন্ন ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন শুধুমাত্র চোখের মুভমেন্ট বা হাতের ইশারায়।


এটি নিঃসন্দেহে প্রযুক্তিতে একটি বিপ্লব ঘটাতে চলেছে। আর কোনো ভলিউম বাটন বা পাওয়ার কন্ট্রোলার থাকবে না—সবকিছুই হবে সেন্সরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। ফলে ফোনের ব্যবহার যেমন সহজতর হবে, তেমনি অভিজ্ঞতাও হবে আরও বেশি ইন্টারঅ্যাকটিভ ও স্মার্ট।

'ঝুবে' কোডনেম এবং প্রোটোটাইপ

শাওমির বাটনবিহীন স্মার্টফোনের যাত্রা শুরু হয়েছিল এক অত্যাধুনিক প্রোটোটাইপ দিয়ে, যার কোডনেম ছিল ‘ওয়াংশু’। এটি ছিল তাদের প্রথম বাটনবিহীন ফোনের ধারণা। 'ওয়াংশু' প্রোটোটাইপটি প্রযুক্তি জগতে বেশ আলোড়ন তুলেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি বাজারে আসেনি। প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ এবং বাজারের চাহিদা পূরণের সক্ষমতার ঘাটতির কারণে শাওমি তখন সেই ডিভাইসটি নিয়ে সামনে এগোতে পারেনি।


কিন্তু শাওমি হাল ছাড়ার পাত্র নয়। তারা পূর্বের সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও উন্নত প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি মডেল নিয়ে কাজ শুরু করেছে, যার কোডনেম ঝুবে’। 'ঝুবে' শুধু আগের প্রোটোটাইপের পুনরাবৃত্তি নয়, এটি সম্পূর্ণ নতুন এবং উন্নততর ফিচার ও প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত একটি মডেল হবে।  


শাওমির এই নতুন ফোনে ব্যবহৃত হবে স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ২ চিপসেট, যা একে বাজারের সেরা স্মার্টফোনগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে তুলবে। উন্নত প্রসেসিং ক্ষমতা, দ্রুত পারফরম্যান্স এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফের মাধ্যমে এটি শুধু হাই-এন্ড ব্যবহারকারীদের জন্যই নয়, বরং সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্যও দারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসবে। 


শাওমি এই মডেল নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতন। তারা পূর্বে করা ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ফোনটিকে আরও নিখুঁত ও কার্যকরীভাবে বাজারে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে। প্রতিটি খুঁটিনাটি পরীক্ষার পরই ‘ঝুবে’ বাজারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শাওমি যে এই ফোনটির মাধ্যমে স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রিতে এক বিপ্লব ঘটানোর পরিকল্পনা করছে, তা স্পষ্ট। 


শাওমির বাটনবিহীন ফোন ‘ঝুবে’ যে শুধু একটি ফোন নয়, বরং প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ কেমন হবে তার এক ঝলক, তা বলাই যায়।

আন্ডার-স্ক্রিন ক্যামেরা এবং আরও অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্য

শাওমির নতুন বাটনবিহীন স্মার্টফোনটি প্রযুক্তির এক বিস্ময়কর উদ্ভাবন হতে যাচ্ছে। এই ফোনের সবচেয়ে আলোচিত বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো আন্ডার-স্ক্রিন ক্যামেরা। আমরা সাধারণত ফোনের সামনে থাকা ক্যামেরাকে নোটচ বা পাঞ্চ-হোল ডিজাইনে দেখতে অভ্যস্ত, যা ডিসপ্লের একটি নির্দিষ্ট অংশ দখল করে। কিন্তু শাওমি তাদের এই ফোনে সেই প্রচলিত ধারণাকে একেবারে বদলে দিচ্ছে। আন্ডার-স্ক্রিন ক্যামেরা প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যামেরাটি ফোনের ডিসপ্লের নিচে লুকিয়ে থাকবে, ফলে ব্যবহারকারীরা একটি সম্পূর্ণ **বেজেল-লেস ডিসপ্লে** উপভোগ করতে পারবেন। ভিডিও কল, সেলফি বা ছবি তোলার সময় ক্যামেরাটি কার্যকর হবে, কিন্তু অন্যান্য সময়ে এটি অদৃশ্য হয়ে থাকবে, ফলে পুরো স্ক্রিনের অভিজ্ঞতা হবে আরও বিস্তৃত এবং মনোমুগ্ধকর।


এখানেই শেষ নয়। শাওমি তাদের এই নতুন ফোনে সংযুক্ত করেছে একটি অত্যাধুনিক ২কে ১২০ hz এলটিপিও ডিসপ্লে, যা ভিজ্যুয়াল পারফরম্যান্সকে আরও তীক্ষ্ণ ও প্রাণবন্ত করে তুলবে। ২কে রেজোলিউশনের ফলে স্ক্রিনের প্রতিটি পিক্সেল হবে আরও স্পষ্ট ও ডিটেইল্ড, এবং ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেটের মাধ্যমে স্ক্রলিং বা গেমিংয়ের সময় কোনো ধরনের ল্যাগ ছাড়াই অত্যন্ত মসৃণ অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। 


শাওমির এই ফোনটি শুধু দৃষ্টিনন্দন হবে না, বরং শক্তির দিক থেকেও দারুণ কার্যকর হবে। এর ৪৫০০ এমএএইচ ব্যাটারি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার নিশ্চিত করবে, এবং সেই সঙ্গে থাকছে ২০০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট। এর ফলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফোনটি চার্জ হতে সক্ষম হবে। দিনের শুরুতে যদি আপনি ব্যাটারির চার্জ নিয়ে চিন্তিত থাকেন, শাওমির এই স্মার্টফোন সেই চিন্তাকে একেবারে দূর করে দেবে। এক হাতে কাজ করছেন আর অন্য হাতে ফোনটি মাত্র কয়েক মিনিটে পুরো চার্জ করে ফেললেন, এমন সুবিধা অবশ্যই আমাদের জীবনের গতি আরও দ্রুততর করবে। 


শাওমির এই নতুন স্মার্টফোনটি প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার এক চমৎকার উদাহরণ হতে চলেছে। আন্ডার-স্ক্রিন ক্যামেরা থেকে শুরু করে এলটিপিও ডিসপ্লে এবং দ্রুত চার্জিং ক্ষমতা—সব মিলিয়ে এটি এমন একটি ডিভাইস হবে যা শুধু ব্যবহারকারীদের জীবনকে সহজ করবে না, বরং প্রযুক্তির নতুন দিগন্তের দিকে আমাদের নিয়ে যাবে।

বাজারে আসার সম্ভাবনা

শাওমির বাটনবিহীন স্মার্টফোন নিয়ে প্রযুক্তি জগতে কৌতূহলের যেন শেষ নেই। এই ডিভাইসটি কবে নাগাদ বাজারে আসবে, তা নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। বিশ্লেষকদের ধারণা অনুযায়ী, শাওমির এই অত্যাধুনিক বাটনবিহীন ফোনটি ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে বাজারে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। তবে এই সম্পর্কে শাওমির পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, যা প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে আগ্রহ এবং উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।


শাওমির বাটনবিহীন ফোনটি একটি বিপ্লবী ডিভাইস হতে যাচ্ছে—এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তার সাথে আসে আরও একটি প্রশ্ন: এই ফোনটি কবে হাতে পাওয়া যাবে? যদিও বিভিন্ন সূত্র থেকে ফাঁস হওয়া তথ্য এবং বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস ফোনটির সম্ভাব্য রিলিজ টাইমলাইন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিয়েছে, তবে শাওমির নীরবতা এই কৌতূহলকে আরও গভীর করে তুলেছে। 


তবে শাওমি এর আগেও প্রোটোটাইপ নিয়ে কাজ করেছে, যেগুলো শেষ পর্যন্ত বাজারে আসেনি। তাই এই নতুন ফোনের আনুষ্ঠানিক উন্মোচন নিয়ে প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও, আশার পারদ কিন্তু অনেক উঁচুতে। সবাই অপেক্ষা করছে, কবে এই প্রযুক্তিগত বিস্ময়কর ডিভাইসটি হাতে পাওয়ার সুযোগ হবে। ২০২৫ সালে শাওমি যদি সত্যিই এই ফোনটি বাজারে নিয়ে আসে, তবে এটি যে এক বিপ্লব ঘটাবে, তা বলাই বাহুল্য।


যতদিন পর্যন্ত শাওমি থেকে অফিসিয়াল ঘোষণা না আসে, ততদিন প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য এটি শুধুই কৌতূহল এবং উত্তেজনার একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে। তবে একবার এই ফোন বাজারে এলে এটি যে স্মার্টফোনের ধারণাকেই বদলে দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পদক্ষেপ

শাওমির পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন রিয়েলমি এবং অ্যাপলও ইশারার মাধ্যমে ফোন নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। রিয়েলমি তাদের স্মার্টফোনে ইনবিল্ট সেন্সর ব্যবহার করে ইশারার মাধ্যমে মেনু এবং অ্যাপ চালানোর সুযোগ দিচ্ছে। অন্যদিকে, অ্যাপলের আইওএস ১৮ এর কিছু মডেলে চোখের মুভমেন্ট ব্যবহার করে ফিচার নিয়ন্ত্রণের সুবিধা আনা হচ্ছে। যদিও এই প্রযুক্তি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, তবুও এটি স্মার্টফোনের ব্যবহারের ধরণকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।

শেষ কথা

শাওমির নতুন বাটনবিহীন স্মার্টফোন প্রযুক্তির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। যদিও এখনও এটি নিশ্চিত নয়, তবে শাওমির পূর্বের কাজগুলো এবং ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে বোঝা যায় যে তারা স্মার্টফোনের ভবিষ্যৎকে নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। 


যদিও শাওমি আগেও এই ধরনের ফোন নিয়ে কাজ করেছিল, তবুও এবার তারা (ঝুবে' মডেলটি বাজারে আনতে সফল হবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট—বাটনবিহীন স্মার্টফোনের যুগ খুব শিগগিরই আসতে চলেছে, আর শাওমি সেই যাত্রার প্রথম সারিতেই থাকবে। 


আপনার ভাবনা কী?

বাটনবিহীন ফোন কি আসলেই আমাদের জীবনে সুবিধা আনবে?